কোর্সের উদ্দেশ্যঃ
টেক্সটাইল শিল্প বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্পখাত। সারা বিশ্বের মানুষের পোষাকের চাহিদা মেটাতে যে পরিমান বস্ত্র বা পোষাক উৎপাদিত হয়, সেখানে দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলো বাংলাদেশ (Made in Bangladesh)। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পর বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়, বাংলাদেশে মোট রপ্তানী আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে এই পোষাক শিল্পখাত থেকে। প্রায় ৪০ লাখ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয় এই পোশাকশিল্পে। পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার সংখ্যার দিক থেকেও বিশ্বে সবার ওপরে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চাকরির ক্ষেত্র হচ্ছে টেক্সটাইল সেক্টর। প্রতিবছর প্রায় হাজার হাজার দক্ষ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার এর প্রয়োজন হয় এই সেক্টরে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় দক্ষ টেক্সটাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পাওয়া যায় না। বর্তমানে আমাদের দেশে ৪৪৫টি স্পিনিং ফ্যাক্টরী, ৭৯৬টি ফ্যাব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরী, ২৪০টি ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং ফ্যাক্টরী এবং ৫৫০০টিরও বেশি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী এই শিল্পখাতকে সচল রাখতে দক্ষ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার গড়ে তোলা এই কোর্সের প্রধান উদ্দেশ্য।
এই কোর্স কি পড়ানো হয়ঃ
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্রছাত্রীরা মূলত চারটি ধারাবাহিক বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করে।
১) ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং – যেখানে ছাত্রছাত্রীরা টেক্সটাইল ফাইবার বা আঁশ থেকে সুতা প্রস্তুত প্রক্রিয়া সম্পর্কীত যাবতীয় তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিক জ্ঞান লাভ করে।
২) ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং – যেখানে ছাত্রছাত্রীরা সুতা থেকে কাপড় প্রস্তুত প্রক্রিয়া সম্পর্কীত যাবতীয় তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিক জ্ঞান লাভ করে।
৩) ওয়েট প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং – যেখানে ছাত্রছাত্রীরা কাপড়কে ব্যবহার উপোযোগী করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন রঙে রঙিন করে তোলার প্রক্রিয়া সম্পর্কীত যাবতীয় তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিক জ্ঞান লাভ করে
৪) সর্বশেষ অ্যাপারেল ম্যানুফেকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং – যেখানে ছাত্রছাত্রীরা কাপড়কে পোষাকে রুপান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কীত যাবতীয় তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিক জ্ঞান লাভ করে।
০৪ বছরব্যাপী উক্ত চারটি বিষয়ের যাবতীয় জ্ঞান অর্জন শেষে ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পোষাক শিল্পে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মে যোগদান করতে সক্ষম হয়।
জব প্লেসমেন্ট সেক্টরঃ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চাকরির ক্ষেত্র হচ্ছে টেক্সটাইল সেক্টর। মূলত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ছোট-বড় টেক্সটাইল বা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির পণ্য উৎপাদন কার্যক্রমের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারগন যে সকল ক্ষেত্রে চাকুরীর সুযোগ লাভ করে তা নিম্নরুপঃ
- সরকারী বিভিন্ন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি
- বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত দশী-বিদেশী টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি
- জুট রিসার্চ ইন্সটিটিউট
- তুলা উন্নয়ন বোর্ড
- বস্ত্র মন্ত্রণালয়
- রেশম বোর্ড
- বিভিন্ন বায়িং অফিস
- বুটিক হাউস
- ফ্যাশন হাউস
- কাস্টমস
- বিনিয়োগ বোর্ড
- বিসিক ইত্যাদি
সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি ব্যাংক এবং শিল্পঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর শিল্পঋণ বিতরণ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ রয়েছে। ফলে শুধু দেশের অভ্যন্তরেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য রয়েছে বিশাল চাকুরির ক্ষেত্র।
ভর্তির যোগ্যতাঃ
ন্যূনতম এসএসসি/সমমান পাস।
সাধারণ গণিতে ন্যূনতম জিপিএ ২.০০ এবং ৪০% নম্বর
বয়স এবং এসএসসি পাসের বছরের জন্য কোন সীমাবদ্ধতা নেই।
উচ্চ শিক্ষার সুযোগঃ
টেক্সাটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সম্পূর্ণ ডিপ্লোমা করার পরে তাদের বিএসসি শেষ করার সুযোগ রয়েছে। এবং M.Sc. DUET, IEB এবং বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সাটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের B.Sc. , M.Sc. এবং বিদেশ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি।
পাঠ্যক্রমঃ
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের (বিটিইবি) ডিপ্লোমা ইন টেক্সাটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পাঠ্যক্রম তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক উভয় উপাদান নিয়ে গঠিত। প্রোগ্রামের সময়কাল চার বছর, এবং এটি আটটি সেমিস্টারে বিভক্ত।